প্রতারণার মাধ্যমে মাত্র দুই মাসে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে (৪১) গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুক্রবার (১ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশান থানা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সিআইডি জানায়, রিং আইডি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে যাত্রা শুরু করে। একপর্যায়ে এই মাধ্যমে বিভিন্ন সার্ভিস যুক্ত করে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া শুরু করে। এর মধ্যে একটি প্রক্রিয়া ছিল, তাদের কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ বা ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আইডি কিনতে হতো। আইডি ব্যবহার করে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন দেখেই মাসে সাড়ে ১২ হাজার বা ১৫ হাজার টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখানো হতো।
বিজ্ঞাপন দেখেই আয়ের বিষয়টি কোনভাবেই সম্ভব নয়। এটি এক ধরনের এমএলএম এর মতো গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল। অনেকের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে হয়তো কিছু মানুষকে সামান্য টাকা ফেরত দিতো। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো ভিত্তি নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া সম্প্রতি ইকমার্স সাইটের মতো তারাও অস্বাভাবিক ডিসকাউন্টে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির নামে ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন পরিচালনা করছিল।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, কেবল মাত্র কমিউনিটি জবসের অর্থাৎ বিজ্ঞাপন দেখে আয়ের খাত থেকেই গত মে মাসে ২৩ কোটি ৯৪ লাখ, জুন মাসে ১০৯ কোটি ১৩ লাখ এবং জুলাই মাসে ৭৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে সংগ্রহ করেছে। জনগণের কাছ থেকে আদায় করা এসব টাকার পাচার ঠেকাতে ইতোমধ্যে তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানায় সিআইডি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ভুক্তভোগীর দায়ের করা একটি মামলা তদন্তের ধারাবাহিকতায় রিং আইডির পরিচালক সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) রেজাউল মাসুদ জানান, রিং আইডি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও সম্প্রতি বিভিন্ন সেবা যুক্ত করার মাধ্যমে ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া শুরু করে। শুধুমাত্র গত জুন-জুলাই মাসেই প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গ্রেফতার সাইফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এসএসপি রেজাউল মাসুদ জানান, এ বিপুল পরিমাণ অর্থ গ্রহণের কোনো অনুমোদন তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান গ্রহণ করেনি। তাদের এ কার্যক্রমের সঙ্গে কারা কীভাবে জড়িত রয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায়-কীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে তা জানতে সাইফুলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হবে।
ইতোমধ্যে রিং আইডির বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা দায়েরের তথ্য পাওয়া গেছে। জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান এসএসপি রেজাউল মাসুদ।
সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর